নিজস্ব প্রতিবেদক

র‍্যাবের ওয়ান্টেড আসামি লিপন চৌধুরী। মিরপুরে প্রায় ২ যুগ ধরে “তার নিয়ন্ত্রিত সিন্ডিকেট দাপটের সাথে ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ নানা রকম সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে। দখলবাজি, নারী নির্যাতন, হত্যা, খুন, গুম ও জিম্মি করে।লিপন।

আশপাশের কয়েকটি থানা এলাকায় সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে। গত ২৯ জুলাই মিরপুর থানা পুলিশ চাঁদাবাজির একটি মামলার আসামি হিসেবে চুন্নুকে গ্রেপ্তার করে। তাকে গ্রেপ্তারের পর বেরিয়ে আসে ওই এলাকার দুর্ধর্ষ চাঁদাবাজ লিপন সিন্ডিকেট চক্রের নানা চমকপ্রদ কাহিনী।

মিরপুর থানার ওসি ওয়াজেদ আলী জানান, এই সিন্ডিকেটের লিডার লিপন চৌধুরী। মিরপুর ছাত্রলীগের সভাপতি শামীম ও যুবলীগ কর্মী সেলিম হত্যার অভিযোগে মামলা হয়েছিল তার বিরুদ্ধে। সে অস্ত্রধারী দুর্ধর্ষ এক সন্ত্রাসী। ১৯টি মামলার আসামি সে। সারা দেশে র‍্যাবের ওয়ানটেড আসামিদের মধ্যে তার নাম ছিল ৭৮ নম্বরে। মাইক্রোবাসে চড়ে লিপন তার সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে বিভিন্ন সময় ধণাঢ্য ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন নির্মাণাধীন

ভবন কর্তৃপক্ষকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করে। কখনও ‘পুলিশ’ ও কখনও ‘সাংবাদিক’ লেখা থাকে তার গাড়িতে। আর এর আড়ালে মাদক পাচারের সাথেও জড়িত সে। জানা যায়, মিরপুরের কুখ্যাত চন্দন বাহিনীর ‘কিলার’ হিসেবে ১৯৯১ সালে লিপনের উত্থান। লিপনের এই সিন্ডিকেট চক্রের সদস্যদের ধরার জন্য মিরপুর থানা পুলিশ দীর্ঘদিন ধরে ওত পেতে ছিল কিন্তু। কিছুতেই তাদের বাগে আনতে পারছিল। না। অন্যদিকে, এলাকার ভুক্তভোগী কেউ সাহস করে এ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে মামলাও করছিল না। অবশেষে গত ২৮ জুলাই এক চাঁদাবাজির মামলার সূত্র ধরে এ সিন্ডিকেটের এক সদস্য ধরা পড়ে। কিন্তু চতুর দলনেতা লিপন চৌধুরী তার গাড়ি ও অস্ত্রসহ পালিয়ে যায়। মিরপুর থানা পুলিশ জানায়, বর্তমানে তাকে ধরার জন্য বিশেষ অভিযান চলছে। সিলেটের বালাগঞ্জ থানায় একটি খুনের মামলায় লিপন ৭ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি। উল্লেখ্য, গত ২৮ জুলাই জনৈক জিএম সাহেব আলী স্টোন বিল্ডার্স লি., ১৫/৩৯ মির- পুর-২ এর পক্ষে মিরপুর থানায় একটি মামলা করেন। মামলা নং-২৮/১১, তারিখ: ১১-০৭-১১। ধারা: ১৪৩/১৪৭/৩২৬/৩৮৫/৩৭৯/৫০৬ ও ১৪৪ পোনাল কোড। মামলার এজাহারে সাহেব আলী উল্লেখ করেন, দীর্ঘদিন ধরে এ সিন্ডিকেট আমাদের কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিল। ঘটনার দিন আমি দু’জন সঙ্গীকে নিয়ে নির্মাণ কাজ করছিলাম। এমন সময় ঢাকা মেট্রো চ- ৫১৭৬৩৬ মাইক্রোবাসযোগে লিপন চৌধুরী, আলমগীর কবির চৌধুরী, হারুন উর রশিদ, মোর্শেদ ও আবু তাহের পিস্তল ও দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আমাদের ঘিরে ফেলে। এ সময় লিপন চৌধুরী কোমর থেকে একটি পিস্তল বের করে আমাদের দিকে তাক করে এবং সঙ্গীদের নির্দেশ দেয় আমার ওপর আক্রমণ করার জন্য। নির্দেশ পেয়ে আমাকে আক্রমণ এবং ছুরি ও চাপাতি দিয়ে মারাত্মক জখম করে। এ সময় লিপন চৌধুরী কোমরের আরও ১টি পিস্তল দেখিয়ে বলে, ‘এটি লাইসেন্স করা পিস্তল। তোকে মেরে ফেললে কেউ কিছু বলবে না। ১০ লাখ টাকা না দেয়ার মজাটা দেখাব।’ এরপর আমার সাথে থাকা মোবাইল, ১টি সোনার আংটি ও নগদ ৪৭০০ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে ৭ দিনের মধ্যে ১০ লাখ টাকা দেয়ার হুমকি দিয়ে চলে যায়। পরে আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। উল্লেখ্য যে, লিপন চৌধুরী তার মাইক্রোবাসে ‘সংবাদপত্র’ লিখে সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি করে বেড়ায়। তার মাইক্রোবাসের কোনো কাগজপত্র নেই। বড় ধরনের চাঁদাবাজি করার পর সে বিদেশে চলে যায়। দীর্ঘদিন পালিয়ে থেকে পুনরায় ফিরে এসে আবারো চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কাজে লিপ্ত হয়। তার ৩-৪টি পাসপোর্ট রয়েছে বিদেশে যাওয়ার জন্য। পাসপোর্ট নম্বর হচ্ছে- পিপি নং- ৩০৪৯৪৫৪৩৯। বিভিন্ন থানায় তার নামে ১৯টি মামলা এবং পঞ্চাশের অধিক জিডি রয়েছে।চোখ রাখুন দৈনিক সময়ের কন্ঠ পত্রিক