• শুক্রবার, ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০২:৪৬ অপরাহ্ন
  • [gtranslate]
শিরোনামঃ
চাঁদাবাজিতে বাধা দেয়ায় পাথরঘাটা ও বরগুনায় ৬ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সাইবার মামলা, সাংবাদিক মহলে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ গাজীপুরের কাশিমপুরের নায়েবের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে পুলিশ টাউন এলাকায় চলছে ছিনতাই দেশকে অশান্ত করার ছক তৈরী করেছে আ.লীগ: চরমোনাই পীর।। পুলিশ টাউন এলাকায় চলছে ছিনতাই পুলিশ কনস্টেবল মান্নার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ, একাধিক বিয়ে ও সম্পত্তি আত্মসাৎ গাজীপুর ও টাঙ্গাইলে ছাত্র আন্দোলনে সহিংসতা, অপহরণ ও প্রশাসনের নীরবতা চরফ্যাশনে আহাম্মদপুর ইউনিয়নে পাওনা টাকা চাওয়ায় প্রতিপক্ষের হামলায় আহত -৬।। চরফ্যাসনে প্রবাসীর জমি জোর পূর্বক দখলের অভিযোগ প্রধান উপদেষ্টা সহ ২৩ দপ্তরে সুবিচার চেয়ে আবেদন।। ভোলার চরফ্যাশনে ছাগলকে ঘাস খাওয়াতে গিয়ে বাড়িতে ফিরেনি ১৩ বছরের ইয়ামিন।।

মৃত্যুর মিছিল’ নিয়ে ফেসবুকে যা লিখলেন শায়েখ আহমাদুল্লাহ

সময়ের কন্ঠ রিপোর্ট / ১৬৯ ৫০০০.০ বার পাঠক
Update : বৃহস্পতিবার, ৮ আগস্ট, ২০২৪

দেশে সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ছাত্র-জনতা-পুলিশসহ তিন শতাধিক প্রাণ ঝরেছে। তীব্র আকার ধারন করা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটেছে। সেই ছাত্র-জনতার হাত ধরে দেশে এখন অন্তর্বতী সরকার গঠিত হয়েছে।

যেন অনেকটাই হাফ ছেড়ে বেঁচেছে সাধারন মানুষ। বিগত ৩৬ দিনের অস্থিতিশীল ও মর্মান্তিক পরিস্থিতি আর দেখতে চান না কেউই। যেমনটা চাইলেন দেশের বরেণ্য আলেম আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ।

তিনি বলেছেন, ‘মৃত্যু শুধু এই ছেলেগুলোকেই নিয়ে যায়নি, ধূলিস্যাৎ করে দিয়ে গেছে গোটা পরিবারকেই। এইসব মৃত্যুর মিছিল যেন আর না হয় এদেশে, সেটাই সবার কামনা ও দোয়া। মহান আল্লাহ যেন সে দিকেই নিয়ে যান আমাদের।’

বৃহস্পতিবার বেলা ৩টা ১৭ মিনিটে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে দেওয়া এক দীর্ঘ স্ট্যাটাসে এসব কথা লেখেন শায়খ আহমাদুল্লাহ।

ফেসবুকে তিনি লেখেন, ‘এ দেশের প্রতিটি দরিদ্র পরিবার পরের দিন আরেকটু ভালো থাকার স্বপ্ন নিয়ে রাত্রে ঘুমাতে যায়। পরিবারের যে ছেলেটি তুলনামূলক মেধাবী, স্বপ্ন পূরণের সব চাপ গিয়ে পড়ে তার কাঁধে। ছেলেটিও সানন্দে কাঁধে তুলে নেয় বাবা-মার অপূর্ণ স্বপ্নের দায়িত্ব। সে স্কুলে যায়, পরীক্ষায় বসে, ভালো রেজাল্ট করে আর ভাবে, একদিন সে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে। তারপর বড় চাকরি করে সকল দুঃখের অবসান ঘটাবে।

তাদের মাটির ঘরটা বিল্ডিং হবে। ঘরের সাথেই থাকবে বাথরুম। শীত কিংবা বৃষ্টির রাতে উঠোন পেরিয়ে দূরের বাথরুমে যেতে হবে না বাবা-মাকে। বাবার শুকনো গালে সুখের আলগা মাংস লাগবে। মায়ের মলিন শাড়িটা হবে উজ্জ্বল। ততদিনে ছোট বোনটাও উপযুক্ত হয়ে উঠবে। অনেকগুলো পাত্রের ভেতর থেকে বাছাই করে বোনটার জন্য নিয়ে আসবে যোগ্য রাজপুত্র।

কোনো কোনো বর্ষণমুখর সন্ধ্যায়, জানালার পাশে বৃষ্টির ছাঁট গায়ে মেখে বাবা-মা আর ছোট বোনটার সাথে মুড়িমাখা খেতে খেতে ছেলেটি তার এইসব স্বপ্নের কথা বলে। বোনটি কৈশোরিক উচ্ছলতায় লাফিয়ে উঠে বলে, সত্যিই আমাদের অমন দিন আসবে! বাবা-মা গোপনে মুখ চাওয়া-চাওয়ি করেন। তাদের চোখে টলমল করে পানি।

স্কুল পেরিয়ে ছেলেটির কলেজ জীবন শেষ হয়। ততদিনে তার গা থেকে ঝরে গেছে কৈশোরের পালক। রাতজাগা অধ্যবসায়, পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের দোয়া-ভালোবাসায় ছেলেটি একদিন সত্যি সত্যি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। গ্রামের বদ্ধ পুকুর ছেড়ে সে এসে পড়ে দুকূল উপচানো নদীর বুকে, যে নদী গিয়ে মিশেছে সাগরের মোহনায়।

এতদিন তার জীবন ছিল মায়ের আঁচলে বাঁধা। বাড়ির গরম ভাত খেয়ে মায়ের আঁচলে মুখ মুছে সে কলেজে যেত। এবার শুরু হয় তার পরিবার ছেড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে একলা থাকার জীবন।

মাসে মাসে বাড়ি থেকে ছেলেটির কাছে টাকা আসে। সে টাকার গায়ের লেগে থাকে বাবার ঘামের গন্ধ আর মায়ের শখের পোষা মুরগির ডিমের সৌরভ, মাসের শুরুতে যে ডিম বিক্রির টাকা বাবার হাতে তুলে দেন মা।

কিন্তু সেই অল্প কটি টাকা ক্যাম্পাসের আবাসন ও টিউশান ফি’র উদর পূর্ণ করতে পারে না। ছেলেটি এত ভালো, বাবা-মাকে সে বলেও না তার চাহিদার কথা। চুপচাপ সে বরং খুঁজে নেয় কয়েকটি টিউশনি।

সারাদিন ক্যাম্পাস করে হলে গিয়ে কোথায় একটু বিশ্রাম নেবে, নিজের পড়া পড়বে, তা না করে সে ছুটে যায় টিউশনিতে।এভাবে, পড়া ও পরিশ্রমের ধকল নিতে নিতে মলিন হয় তার দেহের লাবণ্য আর ধূসর হতে থাকে তার স্বপ্নের পরাগ। কারণ, ততদিনে সে জেনে গেছে, এই দেশে চাকরি পাওয়া সহজ নয়। প্রশ্নফাঁস, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি আর বৈষম্যমূলক কোটার ঘায়ে সংকীর্ণ তার মতো সাধারণদের চাকরির বাজার।

ওদিকে তার গ্রামের বাড়িতে ছেলের ‘সাহেব’ হওয়ার অপেক্ষায় প্রহর গোনেন বৃদ্ধ বাবা-মা। তারা স্বপ্ন দেখেন, ছেলে শিক্ষিত হয়ে চাকরি নিয়ে ফিরে আসবে, সাথে থাকবে শিক্ষার সনদ।

ছেলে তাদের একদিন সত্যিই ফিরে আসে, তবে সঙ্গে আসে মৃত্যুর সনদ। সমাজে বিরাজমান বৈষম্য দুরের আন্দোলনে শহিদ হয়েছে তাদের সন্তান। সঙ্গে সঙ্গে ধসে পড়ে বাবা-মার লালন করা অধরা স্বপ্নের প্রতিটি ইট।

আরও পড়ুন:
হতাহতদের ৫ কোটি টাকার সহায়তা দেবে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন
হতাহতদের ৫ কোটি টাকার সহায়তা দেবে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন

কাল্পনিক হলেও অনেক পরিবারের জন্যই গল্পটি সত্য। পত্রিকার পাতায় আমরা এই গল্পের ছেলেটির মতো কত কত শিক্ষার্থীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর খবর পড়ি, কিন্তু আমরা খোঁজও রাখি না, ছেলেগুলোর ছোট্ট কাঁধে কতগুলো মানুষের স্বপ্নের বীজ বপিত ছিল।

মৃত্যু শুধু এই ছেলেগুলোকেই নিয়ে যায়নি, ধূলিস্যাৎ করে দিয়ে গেছে গোটা পরিবারকেই।

এইসব মৃত্যুর মিছিল যেন আর না হয় এদেশে, সেটাই সবার কামনা ও দোয়া। মহান আল্লাহ যেন সে দিকেই নিয়ে যান আমাদের।’

এর আগে, গত ৭ আগস্ট এক পোস্টে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত, গুলিবিদ্ধ ও নিহতদের মধ্যে অসচ্ছলদের জন্য আর্থিক সহযোগিতা দেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি। এজন্য ৫ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে বলেও জানান শায়খ আহমাদুল্লাহ।


আপনার মতামত লিখুন :
জাতীয় আরো নিউজ