• শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১১:০৩ পূর্বাহ্ন
  • [gtranslate]
শিরোনামঃ
সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়নে সরকারকে আরো সক্রিয় হতে হবে চরফ্যাশন খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির ১৫ টাকা করে দুই মাসের চাল বিতরণ করা হয়েছে।। বেগমগঞ্জে জামায়াতে যোগ দেওয়া ছাত্রদল নেতাকে গুলি নরসিংদীতে গৃহবধূকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্বামী যুবায়ের মিয়ার বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহসহ ১১ মামলা হাইকোর্টে বাতিল ছাত্র রাজনীতি ও অন্যান্য এবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবির ভোলার চরফ্যাশনে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির ১৫ টাকা করে চাল বিতরণ করা হয়েছে।। সাংবাদিক কে তথ্য সংগ্রহে বাধা দিয়ে, গাজীপুর জেলা বারের বিএনপি পন্থী আইনজীবী আশরাফুল হুদা স্বৈরাচারী খুনি হাসিনার প্রেতাত্মা গুন্ডার পরিচয় দিয়েছেন কী? চরফ্যাশনে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বাল্য বিয়ের কবল থেকে রক্ষা পেলো মাদ্রাসা শিক্ষার্থী।। সময়ের কন্ঠ’র দৃষ্টিতে জাবিতে “সমগীত সাংগঠনিক কর্মশালা

মোজানাইট বিক্রি করেন “ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড” ডায়মন্ডের নামে, ঠকছেন লাখো গ্রাহক

সময়ের কন্ঠ রিপোর্ট / ৮২ ৫০০০.০ বার পাঠক
Update : সোমবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

 

ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের মালিক  দিলীপ কুমার আগরওয়ালা, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস), আমদানি না করেও দেড় দশক ধরে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ২৮টি শোরুমে ডায়মন্ডের অলংকার বিক্রি করছে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেড। অভিযোগ রয়েছে, ডায়মন্ডের নামে মোজানাইট কিংবা জারকান পাথর বিক্রি করছে প্রতিষ্ঠানটি। মোজানাইট কিংবা জারকান পাথর মূলত এক ধরনের কাচ, যা বিশেষ ব্যবস্থায় তৈরি হওয়ায় দীর্ঘ সময় চকচকে দেখায়। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এই খবর প্রকাশিত হওয়ার পর হাজার হাজার গ্রাহক দিলীপ কুমার আগরওয়ালার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ তুলেছেন।

চোরাচালান ও সরকারের রাজস্ব ফাঁকির তথ্য সামনে আসায় দেশ ছেড়ে পালানোর সুযোগ খুঁজছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শিল্প-বাণিজ্য উপকমিটির সদস্য ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র হত্যা মামলার আসামি দিলীপ কুমার। যেকোনো সময় দেশ ছেড়ে পালাতে পারেন তিনি। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে গোপন বৈঠকও করেছেন। দেশ ছেড়ে পালানোর আগেই তাঁকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

 

দিলীপ কুমার আগরওয়ালার ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের নামে প্রতারণার অভিযোগ তুলে জান্নাতুল ফেরদৌস মিম নামের এক গ্রাহক বলেন, ‘বিভিন্নভাবে জেনেছি, প্রতিষ্ঠানটি গত পাঁচ বছরেও কোনো ডায়মন্ড আমদানি করেনি। তাহলে ২০২২ সালে বিয়ের সময় যে ডায়মন্ডের অলংকার কিনেছি তা কী?’

মিম বলেন, সরকারের উচিত অতি দ্রুত তদন্ত করে গ্রাহককে সঠিক তথ্য প্রদান করা। কারণ, লাখ লাখ টাকা খরচ করে এই গয়নাগুলো কেনা হয়েছে।

তমা ফারহান নামের এক গ্রাহক আক্ষেপ করে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ফেসবুক কমেন্টসে লিখেছেন, ‘আমি যে দুটি রিং, একটা নোজ পিন এত টাকা দিয়ে কিনলাম, এগুলোও কাচ?’

জানা যায়, ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড।

বর্তমানে সারা দেশে প্রতিষ্ঠানটির ২৮টি শোরুম রয়েছে। ২০০৭ সালের মে মাসে বাংলাদেশ থেকে প্রথম মসৃণ হীরা আমদানি এবং পরবর্তী সময়ে রপ্তানি করে সাভারের মির্জানগরের এইচআরসি ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেটের ব্রিলিয়ান্ট হীরা লিমিটেড। অর্থাৎ সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০০৫ সালে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড প্রতিষ্ঠার দুই বছর পর বাংলাদেশে প্রথম ডায়মন্ড আমদানি হয়।

এদিকে, ২০১৭ সালে গ্রাহকদের মোজানাইট কিংবা জারকান পাথরকে আসল হীরার গ্যারান্টি দিয়ে প্রতারণার অভিযোগ ওঠে দিলীপ কুমার আগরওয়ালার বিরুদ্ধে। ওই অভিযোগ তদন্তে ২০১৭ সালের ১৮ অক্টোবর কমিটি গঠন করে দুদক।

 

কিন্তু রহস্যজনক কারণে তদন্ত আর এগোয়নি। অন্যদিকে  দুদকের তদন্তের পর ২০১৮ সালে প্রথম হীরা আমদানি করে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড। ওই বছর তিন হাজার ক্যারেটের অমসৃণ হীরার দুটি চালান আমদানি করে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেড।

কাস্টমস ট্যারিফ শিডিউল অনুযায়ী, এক ক্যারেট ডায়মন্ড (দশমিক ২ গ্রাম) আমদানি করতে সরকারকে ১৫০.৯০ শতাংশ শুল্ক-কর দিতে হয়। অর্থাৎ ১০০ টাকার ডায়মন্ড আমদানি করলে সরকারকে ১৫০ টাকা শুল্ক-কর দিতে হয়। এর মধ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক, ৬০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক, ১৫ শতাংশ ভ্যাট, ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর, ৪ শতাংশ অগ্রিম ট্রেড ভ্যাট ও ৪ শতাংশ রেগুলেটরি ডিউটি আরোপিত আছে।

অন্যদিকে বিদ্যমান ব্যাগেজ রুলে স্বর্ণ ও রুপার বার-অলংকার আমদানির অনুমতি দেওয়া থাকলেও ডায়মন্ডের অলংকারের বিষয়ে কিছু বলা নেই। অর্থাৎ আমদানি ছাড়া দেশে ডায়মন্ড ও ডায়মন্ডের অলংকার আনার সুযোগ নেই।

সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শিল্প-বাণিজ্য উপকমিটির সদস্য ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র হত্যা মামলার আসামি দিলীপ কুমার আগরওয়ালা দেশ ছেড়ে পালানোর সুযোগ খুঁজছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাজনৈতিক পরিচয় পরিবর্তনের চেষ্টাও করছেন তিনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বায়তুল মোকাররম স্বর্ণ মার্কেটের এক ব্যবসায়ী বলেন, একসময় শুধু অভিজাত শ্রেণির নারীরা ডায়মন্ডের অলংকার ব্যবহার করতেন। কিন্তু দেড় দশকে ডায়মন্ডের সহজলভ্যতায় মধ্যবিত্তদের মধ্যে এই মূল্যবান রত্নের ব্যবহার বাড়ছে। বাস্তবিক অর্থে এগুলোও ডায়মন্ড না, শুধু কাচের টুকরা। কারণ, এক-দুই হাজার টাকায় ডায়মন্ডের গয়না বিক্রি করা সম্ভব না।

এই ব্যবসায়ী বলেন, কিছু সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের ছত্রচ্ছায়ায় কাচকে ডায়মন্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। এদের মধ্যে দিলীপ কুমার আগরওয়ালা অন্যতম। আমদানি না করেই এই ব্যবসা করে হাজার কোটি টাকা আয় করেছেন তিনি।

 

দিলিপ কুমারের কিছু পরিচয় তুলে ধরা হল।

দিলীপ কুমার আগরওয়ালা ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) পরিচালক এবং ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)।

১৯৬৮ সালে চুয়াডাঙ্গার এক সম্ভ্রান্ত ব্যবসায়ী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন দিলীপ কুমার আগারওয়ালা। তার বাবা অমিয় কুমার আগরওয়ালাও ছিলেন একজন সফল ব্যবসায়ী। তৎকালীন জার্মানির কোলন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা নিয়ে দেশে ফিরে বাবার ব্যবসার হাল ধরেন অমিয় কুমার।

অমিয় কুমার আগরওয়ালার তিন সন্তান দিলীপ কুমার আগরওয়ালা, পিন্টু কুমার আগরওয়ালা ও রাজেশ কুমার আগরওয়ালা। পিন্টু কুমার আগরওয়ালা ব্যবসায়ী। তিনি মুম্বাই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ ডিগ্রি লাভের পরে নিজস্ব ব্যবসায় মনোনিবেশ করেন। রাজেশ কুমার আগরওয়ালা একজন কিডনি বিশেষজ্ঞ। তিনি আমেরিকার মিয়ামিতে প্রাইভেট হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা।

তিন পুরুষের শিক্ষা ও ব্যবসায়িক ঐতিহ্যপূর্ণ পারিবারিক ছোঁয়ায় শৈশব থেকেই ব্যবসায় আগ্রহী হয়ে উঠেন দিলীপ কুমার আগারওয়ালা। তিনি চুয়াডাঙ্গায় প্রথম ঠিকাদারি ব্যবসা শুরু করেন। পাশাপাশি পান্না মুভিজের ব্যানারে বেশ কিছু ব্যবসা সফল ছবি নির্মাণ করেন। তিনি কুষ্টিয়ার হরিনারায়ণপুরে পান্না সিনেমা হল ও ভেড়ামারায় প্রতিষ্ঠা করেন সজনী সিনেমা হল।

একই সময় শুরু করেন এগ্রো বিজনেস ও পরিবহন ব্যবসা। ২০০৫ সালে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেড নামের রিটেইল শো রুম প্রতিষ্ঠা করেন দিলিপ কুমার আগরওয়ালা। দেশের অভিজাত ক্রেতাদের কথা মাথায় রেখে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেডের মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রথম ডায়মন্ড আমদানি শুরু করেন তিনি। তাই দিলিপ কুমার আগরওয়ালাকে প্রথম ডায়মন্ড আমদানিকারক বলা হয়।

দিলিপ কুমার আগরওয়ালা কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার হরিণারায়ণপুরে দাদার নামে গড়ে তোলেন দোয়ারকা দাস আগরওয়ালা মহিলা কলেজ। তিনি চুয়াডাঙ্গা জেলার ব্যবসায়িক সংগঠনসহ বিভিন্ন ক্লাব ও সামাজিক সংগঠনগুলোতেও সক্রিয়।

চুয়াডাঙ্গা শিল্পকলা একাডেমি, সাহিত্য পরিষদ, রুবি কল্যাণ সমিতি, দৈনিক মাথাভাঙ্গা, সময়ের সমীকরণের উপদেষ্টা ও আজীবন সদস্য পদ লাভ করেন দিলিপ কুমার আগরওয়ালা। সার্ক চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (সার্ক সিসিআই), বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট ও বাংলাদেশ এপেক্স ক্লাবেরও আজীবন সদস্য পদ লাভ করেছেন তিনি।

এছাড়াও দিলিপ কুমার আগরওয়ালা এফবিসিসিআই, বাংলাদেশ প্রযোজক সমিতি, বাংলাদেশ লায়ন্স ক্লাব, বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি, বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতির সদস্য পদ লাভ করেন। তিনি বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতির জেলা ইউনিট ও চুয়াডাঙ্গা প্রেস ক্লাবের আজীবন সম্মাননা লাভ করেন।

তার লেখা রচিত সম্ভাবনার বাংলাদেশ ও ডিজিটাল বাংলাদেশ শিরোনামের দুটি বই অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০১৮তে প্রকাশিত হয়েছে। গ্রন্থ দুটি বিভিন্ন সময়ে পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত দিলীপ কুমার আগরওয়ালার লেখা কলাম ও প্রবন্ধের সংকলন।

ভন্ডামির নামে পুরস্কার:

  • বেস্ট জুয়েলারি কোম্পানি অব দ্য ইয়ার ২০০৮-২০০৯
  • ২০তম বাটেক্সপো ২০০৯
  • রবিনটেক্স গ্রুপ বিজনেস অ্যাওয়ার্ড ২০০৯-২০১০
  • দ্য ফাইনান্সিয়াল মিরর- ১৩তম বাংলাদেশ বিজনেস অ্যাওয়ার্ড ২০০৯-২০১০
  • ওশান গ্রুপ বিজনেস অ্যাওয়ার্ড ২০১০
  • চট্টগ্রাম ক্লাব বেস্ট জুয়েলারি অ্যাওয়ার্ড ২০১০-২০১১
  • মাদার তেরেসা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড


আপনার মতামত লিখুন :
জাতীয় আরো নিউজ