মোঃ ইকবাল হোসেন,বরগুনা প্রতিনিধিঃ
বরগুনায় এক গৃহবধূকে অপহরণ করে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছে অপহরণকারীরা ।
শনিবার ৩১ আগস্ট ২০২৪ সকাল দশটায় তালতলী উপজেলার, নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নে, গৃহবধূর বাড়ির সামনের পাকা রাস্তার উপর থেকে মোটরসাইকেলে অপহরণ করা হয় । অপহরণকৃত গৃহবধূ, নিশান বাড়িয়া ইউনিয়নের, নিজাম হাওলাদার এর কন্যা ।
এ ঘটনায় ৪সেপ্টেম্বর ২০২৪ ইং পাঁচজনকে আসামি করে মোকাম বরগুনা বিজ্ঞ মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল। মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ২০১২ এর ৩,৫,৭,১০,১১ ধারায় মামলা করেছেন গৃহবধুর মা।
মামলার আসামিরা হলেন ,সদর উপজেলার, এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের ,ছোনবুনিয়া গ্রামের আল আমিনের ছেলে জাকারিয়া , নলটোনা ইউনিয়নের, গর্জন বুনিয়া (শিয়ালিয়া) গ্রামের মৃত মনসুর আলী আকন এর ছেলে ফোরকান তিনি ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল মতিঝিল শাখার ২৪/বি আউটার সার্কুলার রোড, মতিঝিল ঢাকা ১২১৭ ,১নং ভবনে, মার্কেটিং শাখায় কর্মরত। এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের, পালের বালিয়াতলী গ্রামের মৃত ইউসুফ মোল্লার ছেলে আব্বাস মোল্লা, ছোনবুনিয়া গ্রামের বাবুল মুসল্লির ছেলে আল-আমিন, ও আল আমিনের স্ত্রী নাজমা ওরফে তাসলিমা।
মামলা সূত্রে ও স্বজনরা জানান অভিযুক্তরা অত্যন্ত শঠতাকারী, মানব পাচার কারী সংঘবদ্ধ লোক, এরা একত্রিত হইয়া গৃহবধূকে জোর পূর্বক অপহরন করিয়া নেওয়ার ও বিদেশে পাচার করিয়া দেয়ার হুমকি দিয়া আসিতে থাকে।
গৃহবধুর মা বলেন আমার মেয়ের গতিবিধি লক্ষ্য করিয়া খোজ খবর নিতে থাকিয়া মেয়ে বসত বাড়ীর সামনে রাস্তায় পানি আনিতে বের হইলে অভিযুক্তরা খোজ রাখিয়া ০৮ জুলাই ২০২৪ ইং সকাল দশটায় বসত বাড়ীর সামনের রাস্তা হইতে দুই খানা মোটর সাইকেল যোগে অভিযুক্তদের হাতে থাকা চাকু ও ডেগার দিয়া আমার মেয়েকে খুনের ভয়ভীতি দেখাইয়া মুখ চাপিয়া ধরিয়া মোটর সাইকেল যোগে অপহরন করিয়া পূর্বদিকে নিয়া যায়।
তিনি আরো বলেন মেয়ের ডাক চিৎকার দিতে চাহিলেও অপহরণকারীরা মুখ চাপিয়া রাখে। আমি ও স্থানীয়রা দেখিতে পাই যে, মোটর সাইকেল যোগে জোর পূর্বক নিয়া যায়। আমি বাধা দেয়ার চেষ্টা করিয়া ব্যর্থ হই। পরবর্তীতে খোজাখুজি করিতে থাকিলে দীর্ঘ এক মাস অতিবাহিত হলে অপহরণকারীদের মোবাইল নম্বর দিয়া আমার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে ফোন দিয়া এবং আরো অপরিচিত নম্বর দিয়া একাধিকবার ফোন করে জানায় আপনার মেয়ে বর্তমানে ঢাকায় আছে। সে খুব গুরুত্বর অসুস্থ্য আপনি ঢাকা যাত্রাবাড়ী এসে নিয়ে যান। পরবর্তীতে আমি ঐ দিনই ঢাকায় রওয়ানা হইয়া যাইয়া পরের দিন ঢাকায় পৌছাইয়া যাত্রাবাড়ী বাসষ্ট্যান্ড হইতে আমার মেয়ে গুরুত্বর অসুস্থ্য অবস্থায় উদ্ধার করি, এবং মেয়ের কাছে জানতে পারি আমার মেয়ে সাড়ে তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা সন্তান নষ্ট করার ঔষধ খাইয়ে মেরে ফেলছে অপহরণকারীরা। আমি মেয়ে নিয়ে আসিয়া চিকিৎসা করিয়া সুস্থ্য করি। আমার মেয়ে অভিযুক্তরা অপহরন করিয়া বিদেশে পাচার করিয়া দিতে চাইছে বলিয়া মেয়ে আরো জানায়। অতঃপর ৩১ আগষ্ট ২০২৪ ইং অপহরণকারীরা পুনরায় আমার মেয়েকে অপহরন করিয়া পাচার করিবার উদ্দেশ্যে দুই খানা মোটর সাইকেল যোগে আসিয়া ওৎ পাতিয়া থাকিলে আমার মেয়ে আমার বসত বাড়ীর সামনে বের হইলে সেই সুযোগে সকাল অনুমান দশটায় মেয়েকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করিয়া মুখ চাপিয়া ধরিয়া জোর পূর্বক মোটর সাইকেল উঠাইয়া অপহরন করিয়া নিয়া যায়। পরবর্তীতে আমি খোজা খুজি করিয়া পূর্বে অভিযুক্তদের দেয়া নম্বরে যোগাযোগ করিলে অপহরণকারীরা আমার নিকট তিন লক্ষ্য টাকা মুক্তিপন দাবী করে, বলে তোমার মেয়েকে জীবিত পাইতে হইলে ৩ লক্ষ্য টাকা নিয়া ঢাকায় চলিয়া আসো। আমি একই দিন বিকাল অনুমান পাঁচটায় আমতলী হইতে ঢাকার গাড়ীতে ঢাকায় গিয়া যোগাযোগ করিলে তখন মামলার ২নং আসামীর হাল ঠিকানায় যেতে বলিলে আমি আসামীর মতিঝিল আউটার সার্কুলার রোড বাসায় গেলে বাসার মধ্যে আমার, কন্যাকে বাধা অবস্থায় দেখিতে পাই। আমি কথা বলিতে চাইলে কথা বলিতে দেয় নাই। তখন সকল আসামীগন বলে ৩ লক্ষ্য টাকা মুক্তিপন না দিলে মেয়েকে জীবিত অবস্থায় পাবি না। অত্র ঘটনা নিয়া কোথাও কোন জিডি বা মামলা করিলে মেয়েকে খুন করিবে বলিয়া হুমকি দেয়। তখন অপেক্ষা করিয়া পরবর্তীতে যোগাযোগ করিতে চাহিলে আসামীগন উক্ত ফোন নম্বরগুলো বন্ধ করিয়া রাখে।
এমতাবস্থায় আমার মেয়ে আসামীদের নিকট নির্যাতিত ও মানবেতর জীবন যাপন করিতেছে। আমার মনে দৃঢ় বিশ্বাস যে, ১-৩ নং আসামীগন আমার মেয়েকে তাহার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষন করিয়া এবং বিদেশে পাচার করিয়া দিতে পারে। এবং খুন করে লাশ গুম করতে পারে। তিনি প্রশাসনের সহযোগিতা চান।
তালতলী থানার (ওসি) মোঃ শহিদুল ইসলাম খান জানান, এ বিষয় মামলা হয়েছে, তদন্ত চলছে, গৃহবধূকে উদ্ধারে পুলিশী তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।