★ সিন্ডিকেটটি টাকা আদায়ে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন একটি, দুইটি, তিনটি নোটিশ, কখনোবা মোবাইল কোর্ট। প্রকৃতপক্ষে এসব নোটিশ টাকা আদায়ের পর অদৃশ্য হয়ে যায়, নেয়া হয়না আর কোন ব্যবস্থা।
★ ছাড়পত্র ও ভবন ভাংগার নোটিশে ঘুস বানিজ্যের বিষয়ে জোটন দেবনাথসহ আরও কিছু কর্মকর্তা কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে দুদক।
বিশেষ প্রতিনিধিঃ
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক জোন ৬/১ এর অথরাইজড অফিসার জোটন দেবনাথ একজন প্রধান পরিদর্শকের নেতৃত্বে কয়েকজন রাজনৈতিক পরিচয়দানকারী ব্যক্তি ও কয়েকজন রাজউকের কর্মকর্তার সমন্বয়ে গড়ে তুলেছেন একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা ঝুঁকিপূর্ণ অবকাঠামো নির্মাণে সহযোগিতা ছাড়াও নকশা ও ছাড়পত্র পাইয়ে দিয়ে লাখ লাখ টাকা বানিজ্য করে আসছে দীর্ঘদিন যাবত। জোটন সিন্ডিকেটের অপতৎপরতায় রাজধানীর তোপখানা, কাকরাইল, বেইলি রোড, মালিবাগ, শাহজাহানপুর, খিলগাঁও, বাসবো, বামপুরাসহ আরও বেশকিছু এলাকা অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। জোটন সিন্ডিকেটের সদস্যরা তাদের চাহিদামতো অর্থ পেলে এসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নির্মাণে আর কোনো ঝামেলা পোহাতে হয়না। তবে চাহিদামতো অর্থ না পেলে সিন্ডিকেটেটি টাকা আদায়ে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন একটি, দুইটি, তিনটি নোটিশ, কখনোবা মোবাইল কোর্ট। প্রকৃতপক্ষে এসব নোটিশ টাকা আদায়ের পর অদৃশ্য হয়ে যায়, নেয়া হয়না আর কোন ব্যবস্থা। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন আংশিক ভেঙে ফেলা হলেও, টাকা আদায়ের পর দেয়া হয় জোড়াতালি। অর্থাৎ অর্থের বিনিময়ে জোটন সিন্ডিকেটেকের আশির্বাদে রাজধানীর একটি বিশাল এলাকায় গড়ে উঠেছে শতশত অবকাঠামোর নামে মরণ ফাঁদ। ভুমিকম্প বা অগ্নিকাণ্ডের মতো ঘটনা এসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবন কেড়ে নিতে পারে শতশত তাজা প্রাণ। সম্প্রতি বেইলি রোডের কোজি কটেজ ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা একটি বাস্তব উদাহরণ। রাজউক জোন ৬/১ এ দীর্ঘদিন অনুসন্ধান করলে জোটন সিন্ডিকেটের বিভিন্ন অপকর্ম বেরিয়ে আসে। জোটন সিন্ডিকেটের সহযোগিতায় নির্মিত কিছু ঝুঁকিপূর্ণ অবকাঠামোর ফিরিস্তিঃ ১।২৩/৩, তোপখানা রোড, সেগুনবাগিচা, ঢাকায় নকশা ছাড়াই বহুতল বানিজ্যিক ভবন নির্মাণ। ২। ৬৩১, উত্তর শাহজাহান ঢাকায় আবাসিকের স্থলে কমার্শিয়াল ভবন নির্মাণ
৩। সবুজবন নূর টাওয়ার, ১৩৮৩/৮/১৫/৩, মৌলভীরটেক, মৌজা- শহর খিলগাঁও। ভবনটিতে নকশায় ৩৮% ভূমি ব্যবহারের অনুমতি থাকলেও ভূমি ব্যবহার করা হয়েছে ৯০% এর চেয়ে বেশি। এমনকি একতলা বেশি করা হয়েছে নকশায় অনুমোদনের চেয়ে।
৪। তারিখ- ১৭/১১/২০২২
মোহাম্মদ ইয়াহ ইয়া খান, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং মোঃ সালেহ্ আহমেদ জাকারিয়া পরিচালক (জোন-৬), রাজউক ও জোটন দেবনাথ, অথরাইজড অফিসার জোন-৬/১, এর নেতৃত্বে, সহকারী অথরাইজড অফিসার মোঃ আব্দুল লতিফ, প্রধান ইমারত পরিদর্শক, আব্দুল্লাহ আল মামুন, মোঃ আব্দুর রহিম, মোঃ ইমরান হোসেন, শাহনাজ খানম এবং ইমারত পরিদর্শক, মোঃ তারেক, মোঃ কামরুজ্জামান, মোঃ শাহিন আরিফুল ইসলাম, অন্যান্য কর্মকর্তাগনের উপস্থিতিতে বনশ্রী, রামপুরা, ঢাকা এলাকায় উচ্ছেদ/ মোবাইল কোর্টের কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। ১) ভবন মালিকঃ সৈয়দ আহমেদ তালুকদার, প্লট নং-১২, ব্লক নং-ই, রোড নং-৮, বনশ্রী, রামপুরা, ঢাকাতে অবস্থিত ইমারতটির ব্যত্যয়কৃত (অংশ) আংশিক অপসারণ করা হয়েছে এবং বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। ২) ইমারত মালিকঃ খন্দকার রাশেদ গং, প্লট নং-৮ ও ১০, ব্লক নং-ই, রোড নং-৮,বনশ্রী, রামপুরা, ঢাকাতে ঢাকাতে অবস্থিত ইমারতটির ব্যত্যয়কৃত (অংশ) আংশিক অপসারণ করা হয়েছে এবং ৫,০০,০০০/- (পাচ লক্ষ টাকা জরিমানা ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। ইমারত মালিক ৩০০ (তিনশত) টাকার নন- জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে অঙ্গিকারনামা দিয়েছেন যে ইমারতের ব্যত্যয়কৃত অংশ নিজ উদ্যোগ ভেঙে অপসারণ করবেন। ৩) ইমারত মালিকঃ Shapno Builders and Developers ltd, প্লট নং- ০৬, ব্লক নং-ই, রোড নং-১০ ঢাকাতে অবস্থিত ব্যত্যয় করে নির্মানের জন্য নির্মানাধীন ইমারতটির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। ৪) ভবন মালিকঃ পিচ ইনোভেটিভ রিয়েল এস্টেট লিঃ, প্লট নং-০৪, ব্লক নং-ই, রোড নং-১০, বনশ্রী, রামপুরা, ঢাকাতে ব্যত্যয় করে নির্মানের জন্য নির্মানাধীন ইমারতটির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। ৫) ভবন মালিকঃ মোঃ জাহিদ হোসেন , প্লট নং-০৭, ব্লক নং-ই, রোড নং-১০, বনশ্রী, রামপুরা, ঢাকাতে ব্যত্যয় করে নির্মানের জন্য নির্মানাধীন ইমারতটির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। ৬) ভবন মালিকঃ বুড়িগঙ্গা রিয়েল এস্টেট লিঃ এর পক্ষে ব্যাবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আলমগীর হোসেন , প্লট নং-১১/১, ব্লক নং-ই, রোড নং-০৭, বনশ্রী, রামপুরা,ঢাকাতে অবস্থিত ইমারতটির ব্যত্যয়কৃত (অংশ) আংশিক অপসারণ করা হয়েছে। ৭) ভবন মালিকঃ মোঃ গোলাম মওলা , প্লট নং-১০, ব্লক নং-ই, রোড নং-৪/১, বনশ্রী, রামপুরা, ঢাকাতে অবস্থিত ইমারতটির আবাসিক এর স্থলে বানিজ্যিক করায় ব্যত্যয়কৃত (অংশ) আংশিক অপসারণ করা হয়েছে। ৮) ভবন মালিকঃ মোঃ রফিকুল ইসলাম গং , প্লট নং-০৪, ব্লক নং-ই, রোড নং-১১, বনশ্রী, রামপুরা, ঢাকাতে অবস্থিত ইমারতটির ব্যত্যয়কৃত (অংশ) আংশিক অপসারণ করা হয়েছে এবং বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। ০৯) ভবন মালিকঃ মোঃ আবু জাফর গং , প্লট নং-০৩ ও ০৫, ব্লক নং-ই, রোড নং-১১, বনশ্রী, রামপুরা, ঢাকাতে অবস্থিত ইমারতটির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।১০) ভবন মালিকঃ পিচ ডেভেলপমেন্ট লিঃ , প্লট নং-২০ ব্লক নং-ই, রোড নং-৪/১, বনশ্রী, রামপুরা, ঢাকাতে অবস্থিত ইমারতটির ব্যত্যয়কৃত (অংশ) আংশিক অপসারণ করা হয়েছে এবং বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। ১১) ভবন মালিকঃ রুমা রিয়েল এস্টেট লিঃ এর পক্ষে ব্যাস্থাপনা পরিচালক পারভিন আক্তার , প্লট নং-২ ব্লক নং-ই, রোড নং-১১ ও ৪/১, বনশ্রী, রামপুরা, ঢাকাতে অবস্থিত ইমারতটির ব্যত্যয়কৃত (অংশ) আংশিক অপসারণ করা হয়েছে এবং বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। মোবাইল কোর্টটির মাধ্যমে ভবনগুলো আংশিক ভেঙে ফেলা হলেও তা পরবর্তীতে প্রতিটি ভবন জোড়াতালি দিয়ে পুনঃনির্মাণ করা হয়েছে। জোটন সিন্ডিকেটের লোকেরা লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে জোড়াতালি দেয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। এভাবে জোটন সিন্ডিকেট প্রতিটি উচ্ছেদ কার্যক্রমকে বানিজ্যে রূপান্তর করেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি ডেভেলপারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ছাড়পত্র থেকে শুরু হয় অর্থ আদায়। এরপর ভবন নির্মাণ পর্যন্ত বিভিন্ন ধাপে, বিভিন্ন কৌশলে সিন্ডিকেটের লোকেরা লাখ লাখ টাকার বানিজ্য করে থাকে। এছাড়া একটি প্লটের ড্যাবে ঝিল উল্লেখ থাকায় তা আবাসিকে সংশোধন করতে জোটন সিন্ডিকেটের সদস্যরা তাদের কোম্পানি থেকে ২৫ লাখ টাকার বানিজ্য করেছেন। একাধিক সূত্র বলছে, জোটন বর্তমানে তার বিভিন্ন অপকর্ম ঢাকতে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ থেকে বদলি হয়ে গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে বদলি হয়েছেন ফ্যাসিষ্ট আওয়ামিলীগ সরকারের পতনের পর। এসব বিষয়ে তথ্য সংগ্রহকালে দৈনিক বর্তমান কথা এর ফোটো গ্রাফারকে হুমকি প্রদান করেছেন জোটন সিন্ডিকেটের একজন অন্যতম সদস্য। শতশত ঝুঁকিপূর্ণ ভবন আংশিক ভাংগার পর জোড়াতালির বিষয়ে অভিযুক্ত জোটন দেবনাথের কাছে জানতে চাইলে, তিনি পরিদর্শকদের উপর দোষ চাপিয়ে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন। জোটন সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ছাড়পত্র ও ভবন ভাংগার নোটিশে ঘুস বানিজ্যের বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক বিলকিস আক্তারের নেতৃত্বে একটি টিম রাজউকে অভিযান পরিচালনা করেন। এসময় জোটন দেবনাথসহ আরও কিছু কর্মকর্তা কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পায়। দুদকের অভিযান পরিচালনার সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সহকারী পরিচালক মিনহাজ বিন ইসলাম ও এ কে এম মর্তুজা আলী সাগর। অভিযানের পরে জোটন সিন্ডিকেটের লোকজন লবিং ও দৌঁড়ঝাপ শুরু করেছেন বিষয়টি দুদকের সাথে সমাধানের জন্য। এ বিষয়ে একাধিক সূত্র প্রতিবেদককে জানিয়েছেন। কমিশনে চুড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার বিষয়ে দুদকে যোগাযোগ করেও এখনো আনুষ্ঠানিক কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।দৈনিক সময়ের কন্ঠ পত্রিকার চোখ রাখুন