‘ভারতের পা-চাটা কুকুর খালেদ মোশাররফ নিপাত যাক।’ প্রচারপত্রটি ছাপা হয়েছিল ‘জাগ্রত জনতা’র নামে। তখন বোঝা যায়নি, এই ‘জাগ্রত জনতা’ কে বা কারা।
অধ্যাপক গোলাম আযম জানতেন, পঁচাত্তরের নভেম্বরে জামায়াতের বেঁচে থাকা নেতা কর্মীরা সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু তাঁরা প্রকৃতপক্ষে কী করেছে, এটা জানার জন্য তিনি ইসলামী ছাত্র সংঘের সভাপতি আবু নাসের মুহাম্মদ আবদুজ জাহেরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। অপ্রকাশ্য থেকেও ইসলামী ছাত্র সংঘ তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছিল। আবু নাসেরের কাছ থেকে তিনি জানতে পারেন, ৫ নভেম্বর যে লিফলেটটি প্রচারিত হয়েছিল, সেটি ছিল ইসলামী ছাত্র সংঘের। এ প্রসঙ্গে গোলাম আযম বলেন:
১৯৭৫ সালে ইসলামী ছাত্র সংঘের সভাপতি ও সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেন যথাক্রমে আবু নাসের মুহাম্মদ আবদুজ জাহের ও মীর কাসেম আলী। আমি সভাপতির কাছ থেকে জানতে পারলাম, কেন্দ্রীয় শুরার সিদ্ধান্ত নিয়েই তারা ৫ নভেম্বরের পূর্বোক্ত প্রচারপত্র বিলি করে।
ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে এরপর কী ঘটছে সে বিষয়ে বিস্তারিত খবর না জানলেও জনগণের ময়দানে ভারতপন্থীদের বিরুদ্ধে দেশের স্বাধীনতার পক্ষে সক্রিয় ভূমিকা পালনের উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় শুরার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ৫ নভেম্বর বিলিকৃত হ্যান্ডবিলের ইতিবাচক ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার ফলে তারা প্রকাশ্যে মিছিল করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং আরও একটি প্রচারপত্র বিলির ব্যবস্থা করে। ৭ নভেম্বর সকালে তাদের ক্ষুদ্র জনশক্তি নিয়ে নারায়ে তকবির আল্লাহু আকবর ও বাংলাদেশ জিন্দাবাদ ধ্বনি দিয়ে রাজপথে বের হয়। প্রচারপত্রের শিরোনাম ছিল-ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়। প্রচারপত্রটি ইসলামী ছাত্র সংঘের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক নাজির আহমদ (পরে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ছিলেন) ড্রাফট করেন বলে নিজামী সাহেব ও আবু নাসের থেকে জানা গেল। এ হ্যান্ডবিলটির বক্তব্য পরদিন দৈনিক ইত্তেফাকে খবর হিসেবে প্রকাশিত হয় বলে। ৭ নভেম্বর সিপাহি জনতার সংহতি মিছিলে যারা বক্তব্য রেখেছে, তারা ওই প্রচারপত্রে বক্তৃতার প্রয়োজনীয় উপাদান পেয়েছে। দেশের স্বাধীনতা রক্ষা, ভারতের আধিপত্য প্রতিরোধ করা ও গণতন্ত্র বহাল করার উদ্দেশ্যে যে আগস্ট বিপ্লব সাধিত হয়, এরই ধারাবাহিকতায় ৭ নভেম্বরের সিপাহি বিপ্লব ঘটে। জনগণ উভয় বিপ্লবেরই পক্ষে বলে প্রচারপত্রে ঘোষণা করা হয়।