গাজীপুর মহানগরীরর কাশিমপুর থানা এলাকায় সংবাদের তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের কয়েকজন সাংবাদিক মামলার শিকার হয়েছেন। এমনকি, ঘটনাস্থলে বা এলাকায় উপস্থিত ছিলেন না এমন একজন সাংবাদিককেও ওই মামলায় আসামি করা হয়েছে। পুলিশ যাচাই না করে অন্যান্যদের সঙ্গে সংবাদের তথ্য সংগ্রহ করতে যাওয়া সাংবাদিকদের নামে তরিঘরি করে মামলা গ্রহণ করে তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান পরিচালনা করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। আলোচিত এই মামলা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তদন্তকারী কর্মকর্তা কাশিমপুর থানার সাব-ইন্সপেক্টর মো. মিজানুর রহমান ফোনে কোন তথ্য দিবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাজীপুর জেলার গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কাশিমপুর থানাধীন সুরাবাড়ি গ্রামের এমদাদুল হকের ছেলে দেওয়ান মোজাম্মেল হক অন্য দাগ-খতিয়ান উল্লেখ করে সৃষ্ট জাল দলিলের মাধ্যমে নামজারি জমাভাগ করিয়ে মো. মাহবুবুর রহমান ও বিশ্বাস পোল্ট্রি এন্ড ফিশ ফিডস্ লিমিটেডের নামে দখল করে নেয়।
বিষয়টি জানতে পেরে আলোচিত জমিটির ওয়ারিশ সূত্রের প্রকৃত মালিক মো. হাবেল মিয়া ও তার পরিবারের ওয়ারিশ সূত্রের প্রকৃত মালিকরা আদালতের শরণাপন্ন হন। বিজ্ঞ আদালত যাচাই ও স্বাক্ষী-প্রমাণের ভিত্তিতে ওই অন্য দাগ-খতিয়ান উল্লেখ করে সৃষ্ট আলোচিত জমির জাল দলিল বাতিল করে দেন।
পরে মো. হাবেল মিয়া গং অন্য দাগ-খতিয়ান উল্লেখ করে সৃষ্ট জাল দলিলের মাধ্যমে করা ওই নামজারি জমাভাগ বাতিল চেয়ে সংশ্লিষ্ট সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর কার্যালয়ে মিস কেস (পিটিশন মোকদ্দমা নম্বর: ৫৪৮/২০২৪, ৫৪৮/২০২৪, ও ৫৪৯/২০২৪) করেন।
এই মিস কেসের ২১ নভেম্বর ২০২৪ সকাল ১১টায় সরেজমিনে তদন্ত করবেন বলে কাশিমপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মো. আব্দুল লতিফ মিয়া স্বাক্ষর করে মো. হাবেল মিয়া গংদের ১৮ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে একটি নোটিশ প্রদান করেন।
ভূমি অফিসের তদন্তের বিষয়টি টের পেয়ে দেওয়ান মোজাম্মেল হক ও মো. মাহবুবুর রহমান ২১ নভেম্বর ২০২৪ সকাল থেকেই আলোচিত ওই জমিতে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত বিপুল সংখ্যক লোক জড়ো করে ইচ্ছাকৃতভাবে গোলযোগ করার উদ্দেশ্যে বেআইনী সমাবেশ করে। এতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটার সম্ভাবনা আঁচ করতে পেরে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকেরা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন তথ্য সংগ্রহ করতে। সাংবাদিকেরা ঘটনাস্থলের তথ্যচিত্র ও ভিডিও ধারণ করে চলে আসেন।
পরের দিন ২২ নভেস্বর ২০২৪ সকালে সাংবাদিকেরা জানতে পারেন তথ্য সংগ্রহ করতে যাওয়া সাংবাদিকদের মধ্য থেকে কয়েকজন সাংবাদিকের নাম ও মোবাইল নম্বর উল্লেখ করে গভীর রাতে কাশিমপুর থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় দৈনিক জনবাণী পত্রিকার গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি নাশিদ আহমেদ তুষারকে ১৫ নম্বর আসামি, দৈনিক জনবাণী পত্রিকা ও চ্যানেল এস টেলিভিশনের কাশিমপুর প্রতিনিধি এবং কাশিমপুর থানা প্রেসক্লাবের কোষাধ্যক্ষ মো. জামাল আহাম্মেদ প্রধানিয়াকে ১৯ নম্বর আসামি, দৈনিক স্বাধীন বাংলা পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার মো. হাসমত (হাসু)-কে ৩০ নম্বর আসামি করা হয়েছে। এছাড়াও ঘটনাস্থলে বা এলাকায় উপস্থিত না থাকলেও দৈনিক অগ্নিশিখা পত্রিকার কাশিমপুর প্রতিনিধি এবং কাশিমপুর থানা প্রেসক্লাবের আইন বিষয়ক সম্পাদক বিপ্লব হোসেন ফারুককে ৩১ নম্বর আসামী করা হয়েছে।
মামলার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কাশিমপুর থানার সাব-ইন্সপেক্টর মো. মিজানুর রহমান বলেন, ফোনে কোন তথ্য দিব না। তিনি বলেন, আপনি থানায় এসে এককাপ চা খেয়ে আপনার যা যা তথ্য লাগে নিয়ে যান।
সরেজমিনে তথ্য সংগ্রহের দায়িত্ব পালনকারী নিরপেক্ষ সাংবাদিকদের ফৌজদারী মামলায় আসামি করায় বাংলাদেশে স্বাধীন সাংবাদিকতা আবারো হুমকির মুখে পড়েছে।তথ্য সংগ্রহের হামলার ভিডিও ফুটেজ ডকুমেন্টস হিসেবে জব্দ আছে। দৈনিক সময়ের কন্ঠ পত্রিকায় চোখ রাখুন